গল্পঃ ম্যাক লরেন্সের উইল
বইঃ তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১৪১
লেখকঃ শামসুদ্দিন নওয়াব
প্রকাশঃ একুশে বই মেলা ২০১৭
রিভিউ লেখকঃ জাহিদ মুন্না
ম্যাক লরেন্সের উইল গল্পটি তিন গোয়েন্দা সিরিজের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবচেয়ে বড় গল্প। গল্পটি শুরু হয় মুসার কার্লি দাদুর পোকার খেলার সাথী ম্যাক লরেন্স নামক এক প্র্যাক্তন নেভির বিমান চালকের মৃত্যুপূর্বক করে যাওয়া উইলের মাধ্যমে। অপরিচিত এই বৃদ্ধের উইলে তিন গোয়েন্দার জন্য রেখে যাওয়া হয় তার বাড়ির জঙ্গলে থাকা নেভির পরিত্যাক্ত একটি যুদ্ধ বিমান ও জটিল ধাঁধা, যে ধাধার সমাধান করলে ঘুচবে বহু বছর আগে ম্যাক লরেন্সের করা অজানা কোন পাপ। ধাঁধা সূত্র হিসেবে রেখে যাওয়া হয়েছে কিছু অচেনা নাম ও কিছু অর্থহীন সংখ্যা। তিন গোয়েন্দার ধারণা রহস্যের শেষ প্রান্তে গিয়ে মিলবে গুপ্তধন। সত্যিই কি তাই?
অনুসন্ধান শুরু করলো কিশোর, মুসা ও রবিন। ওরা জড়িয়ে গেল ভারতীয় রাজার চুরি যাওয়া ধনভাণ্ডার ও অভিশপ্ত এক মূল্যবান স্যাফায়ারের সঙ্গে। সাথে আরও জুড়ে গেল কিছু মানুষের পূর্বে করা অজানা কোন পাপের রহস্য। কিন্তু গুপ্তধন খোঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ রইলনা এই রহস্য। একের পর এক বিপদ হানা দিল তিন গোয়েন্দার উপর। অজানা শত্রুর আক্রমনে একাধিকবার প্রান হারাতে বসল তিন গোয়েন্দা। আগুনে পুড়িয়ে, অজানা বিষ দিয়ে, সাগরের নিচে হারপুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হল কিশোর-মুসা-রবিনকে। ভয় পেয়ে মুসা ছেড়ে দিতে চাইলো গোয়েন্দাগিরি। কিন্তু ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পাত্র কিশোর না। লেগে রইলো ওরা রহস্যের পেছনে। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে অনেকেই। এর উপর যোগ হল অজানা অনেক প্রশ্ন। প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে গিয়ে নিজেদের উপর বিপদ আরও ঘনীভূত হল।
যাদের সাহায্য নিচ্ছে তিন গোয়েন্দা তারা সবাই কি সত্যিই বন্ধু? ম্যাক লরেন্সের কাছ থেকে পাওয়া রহস্যময় ছবিতে থাকা রাজকন্যারই বা এই কেসের সাথে কি সম্পর্ক? এতসব জটিল রহস্যের গোলকধাঁধার সাথে কপালে এসে জুটেছে স্যালভেজ ইয়ার্ডের নতুন বদমেজাজি কর্মচারী হেনরি জ্যাবলস্কি। এটিই কি তবে তিন গোয়েন্দার প্রথম অসমাপ্ত কেস? সত্যিই কি আছে গুপ্তধন? নাকি সম্পূর্ণ অন্য কোন রহস্য আছে এর পেছনে?
জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে তিন গোয়েন্দা সিরিজের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সবচেয়ে বড় গল্প 'ম্যাক লরেন্সের উইল'। তিন গোয়েন্দা সিরিজের সবচেয়ে বড় ভলিউম, ভলিউম ১৪১ এর তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় গল্প এটি। আমার পড়া তিন গোয়েন্দা সিরিজের সবচেয়ে সুন্দর গল্প গুলোর মধ্যে একটি হলো 'ম্যাক লরেন্সের উইল'। কি নেই গল্পটিতে? আমাদের চিরচেনা মমতাময়ী মেরী চাচী, সর্বদা তিন গোয়েন্দার পক্ষে থাকা রাশেদ চাচা, পাশা স্যালভেজ ইয়ার্ডের ব্যাস্ত দিন, তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার, গোপন পথ, তিন গোয়েন্দার ফোন আসলে ওয়ার্কশপে জ্বলা সেই লাল বাতি, পেরিস্কোপ, ফোনের লাউড স্পিকার, খুদে দিকনির্দেশক পোকা (!), মুসার মার বকুনি, ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের সাহায্য,রোলস রয়েস, ইংরেজ শোফার হ্যানসন, পুরনো ফক্সভাগেন, মুসার অযথা ভয় ও আতংক এবং খাবারের প্রতি লোভ, কিশোরের রহস্যময় আচরণ ও অসাধারণ বুদ্ধি সবই উপস্থিত এই গল্পটিতে। আমাদের সেই চিরচেনা তিন গোয়েন্দাকে বেশ ভালভাবেই ফিরে পেয়েছি 'ম্যাক লরেন্সের উইল' গল্পটিতে।
অসাধারণ বর্ণনা ও গতিশীল ঘটনা প্রবাহের জন্য এতো বড় গল্পটি পড়তে একবারও বিরক্ত লাগবেনা কারো। পুরো গল্পের কোথাও এতটুকুও মনোযোগ সরানোর উপায় নেই। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই গল্পটি তিন গোয়েন্দাপ্রেমীদের এতদিনের সব আক্ষেপ দূর করে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। এই গল্পটি পড়ে তিন গোয়েন্দা পাঠকরা বুঝতে পারেবে যে এখনো শেষ হয়ে যায়নি তাদের প্রান প্রিয় সিরিজটি। তিন গোয়েন্দা সিরিজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোর প্রায় সবগুলোই ফিরে এসেছে এই গল্পে। সাথে বাড়তি পাওনা হিসেবে যোগ হয়েছে তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টারে ঢোকার নতুন পথ যার নাম 'শীতল পথ'। বেশি কিছু বলে চমক নষ্ট করতে চাইনা। শুধু এইটুকুই বলবো প্রত্যেক তিন গোয়েন্দাপ্রেমীর অবশ্যই পড়া উচিত গল্পটি। তিন গোয়েন্দা সিরিজে এমন গল্প আবার ফিরে আসুক সেই আশাই করি।